সারা পৃথিবীর ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে এশিয়ার দেশগুলোর একটা বিশেষ কদর রয়েছে। পশ্চিমা নাগরিকরা তাদের একঘেঁয়ে শীতল শুষ্ক আবহাওয়া থেকে এশিয়া এর উষ্ণ এবং আদ্র আবহাওয়ার ছোঁয়া পেতে দূর দুরান্ত থেকে ছুটে আসতে মোটেও দ্বিধা করে না। এশিয়ার আবহাওয়া, মানুষ জন এবং সংস্কৃতি সবই যেন তাদের কাছে নতুনত্ব বয়ে নিয়ে আসে। পশ্চিমারা সাধারণত এশিয়া তে আসে একটু উষ্ণ এবং মসলাদার স্বাদ পাবার জন্যে, সেটা পরিবেশ, মানুষ, প্রকৃতি বা খাবার যাই হোক না কেন। এশিয়া তাদের কখনই নিরাশ করেনি। এশিয়া তাঁর সীমাহীন বৈচিত্র্য দিয়ে বারবার জয় করেছে ভ্রমণবিলাসীদের মন।
আমরা আপনাদের জন্যে নিয়ে এসেছি এশিয়া এর সবচাইতে জনপ্রিয় ৫ টি শহরের কথা নিয়ে। শুরু করেছি এশিয়ার সর্বোচ্চ জনপ্রিয় শহর থেকে।
১। হংকং
বিশ্বের বুকে এশিয়া কে সুপরিচিত করতে যে কয়টি রাষ্ট্রকে প্রধান কারন হিসেবে ধরা হয়, হংকং তাদের মধ্যে অন্যতম। চীনের প্রবেশদ্বার বলা যেতে পারে প্রাক্তন এই ব্রিটিশ কলোনিটিকে। হংকং দ্বীপ, লান্তাউ দ্বীপ, কউলুন পেইনিনসুলা সহ মত ২৬২ টি দ্বীপ মিলে হংকং গঠিত। চীনা সংস্কৃতির প্রভাব থাকলেও তা চাইনিজদের থেকে অনেক আলাদা এবং বৈচিত্র পুর্ণ। খাদ্যাভ্যাসও দেখা যায় প্রাশ্চ্চ এবং প্রচ্ছদদের মিশেল। পৃথিবীর চতুর্থ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাহলেও পর্যাপ্ত পরিকল্পনার কারণে এখানে নেই কোন ট্রাফিক জ্যাম বা অন্য কোন অব্যাবস্থা। নেই দুর্নীতি, নোংরা পরিবেশ অথবা নিরাপত্তাহিনতা।
নগরায়নের জন্যে ২৫% জায়গা এবং পার্ক ও বিনোদনের জন্যে ৪০% যায়গা বরাদ্দ আছে। বাকি এলাকা পুরোটাই বনাঞ্চল। হংকং এর আরও প্রাকৃতিক পরিবেশ গুলো উপভোগ করতে চাইলে এর আশে পাশে ছড়ানো দ্বীপগুলোতে বেড়াতে যেতে হবে। এখানে পাবেন অনেক সুন্দর সব সৈকত এবং সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা।
২। মালদ্বীপ
বর্তমান সভ্যতা থেকে বেশ আড়ালেই অবস্থিত ভারত মহাসাগরের এই চমৎকার দ্বিপপুঞ্জ। প্রায় ১২০০ দ্বিপের সমন্বয়ে এশিয়ার চমৎকার দেশটি এই গড়ে উঠেছে। শুভ্র সচ্ছ নীলাভ পানি,বালুকাময় সৈকত, কোরাল রিফ এক অপূর্ব সমন্বয় দেখা যাবে প্রতিটি দ্বীপেই।
মালদ্বীপকে বলা হয় এশিয়ার দ্বিতীয় চমৎকার পর্যটন কেন্দ্রও, চতুর্থ আরাম দায়ক সৈকত সমৃদ্ধ এলাকা ও পঞ্চম হানিমুন গন্তব্য! এখানকার সৈকত গুলো স্কুবা ডাইভিং এবং স্নরকেলিং করার জন্যে আদর্শ, যা আপনার মনকে বর্ণিল অভিজ্ঞতায় ভরে দিবে।
৩। টোকিও
এশিয়ার চমৎকার শহরের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে টোকিও। কেবল এশিয়াই নয় বরং টোকিওকে বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ এবং আধুনিক শহর। রাজধানী এবং প্রধান শহর হওয়ায় এখানে জনবসতি ও ব্যাস্ততা অনেক বেশী। সড়কে প্রচুর জনসমাগম দেখা যায়। সেদিক থেকে নতুন পর্যটকদের জন্যে অনেক সময় ঝামেলাময় কিছু পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। নমুগ্ধকর এই শহরের অভিজ্ঞতা নিতে হলে আপনাকে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহন করতেই হবে বলা যায়। এর পাশাপাশি জুকিজি মার্কেট, টোকিও ন্যাশনাল মিউজিয়াম ও মেইজি স্রাইনের মত অনেক দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের দুর্লভ অভিজ্ঞতা পাবেন।
৪। ফুকেট
ফুকেটই থাইল্যান্ডের সবচাইতে বড় দ্বিপ যার আয়তন প্রায় সিঙ্গাপুরের সমান। ফুকেট শব্দের অর্থ পাহাড়ি রত্ন। মোট ৩৬ টি সৈকত আছে এখানে এর মধ্যে পাতং সবচাইতে বিখ্যাত।এটি পর্যটকদের কাছে এশিয়া এর চতুর্থ জনপ্রিয় শহর।
মনমুগ্ধকর সৈকতগুলো এবং তাদের ছুয়ে থাকা সচ্ছ সবুজাভ পানি এখানকার বড় আকর্ষণ। এখনে পাবেন ঐতিহ্যবাহী কাঠের তৈরি লম্বা সব নৌকা। ঘুরতে ঘুরতে দেখতে পাবেন লাইমস্টোনের চমৎকার সব প্রাকৃতিক প্রতিকৃতি। আপনাকে মানসিক ভাবে ফ্রেশ করতে এ সব দৃশ্যই যথেষ্ট। এছাড়া দেখার মোট প্রম্থেপ কেপ, বিগ বুদ্ধা ও নাই হার্ন সৈকতের মোট জায়গা গুলোতো আছেই।
৫। বালি
নুসা পেনিদা, নুসা লেম্বোনগান, নিসা কেনিংগান এই তিনটি দ্বীপ মিলে গঠিত বালি। ভ্রমণপ্রিয় এমন কোন লোক নেই যে বালি সম্বন্ধে জানে না। দুনিয়া জুড়ে সুখ্যাতি ইন্দোনেশিয়ার বালির। এশিয়ার পঞ্চম জনপ্রিয়স্থান স্থানের তকমা তার দখলে।
পর্যটকদের ভ্যাসে হল ‘’পৃথিবীর বুকের স্বর্গ’ বা ‘’হেভেন অন আর্থ’। এখানকার মন মুগ্ধকর রেইন ফরেস্ট, চোখ চেয়ে দেখার মত পর্বতশ্রেণী, সুগভীর এবং সবুজে ঘেরা উপত্যকা একজন পর্যটকের সব ধরনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। আর শুভ্র বালুকাময় সৈকতের কথা না হয় বাদই এ রাখলাম। বালির সৈকতগুলো পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় এর স্বচ্ছ নীলাভ পানির জন্যে যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। বাকিটা পাঠকরা সহজেই অনুমান করে নিতে পারবেন।