আমাদের প্রতিদিন শুরু হয় খুব সুন্দরভাবে। হয়তো কোনদিন ঝুম বৃষ্টি, কোনদিন হয়তো বা ওঠে খুব কোমল রোদ। প্রতিদিনের শেষটাও হয় সুন্দর। লাল রঙ্গা গোধূলি, তার মাঝে কখনো থাকে সাদা মেঘ।
আজকে কতটুক দেখেছেন আপনি?
আপনার আজকের দিনটি শুরুতে হয়তো কোনটিই দেখার সৌভাগ্য পায়নি। হতে পারে ঘুম থেকে উঠেই জ্যাম, ভিড় ঠেলে আপনাকে চলতে হয়েছে অফিসের পথে। বা পরীক্ষার চাপ মাথায় নিয়ে ছুটেছেন লাইব্রেরীতে। অফিসে সারাদিনের শারিরীক, মানসিক চাপ সামলে বাসায় এসে হয়তো ভুলেই গিয়েছেন, এর বাইরেও একটি জীবন আছে।
আপনার চাকরি, ব্যবসা, ঘর সামলানো, বা পড়াশুনা, সবকিছুর ফাঁকে একটু সময় বের করে ঘুরে আসুন না কয়েকদিনের জন্য পাহাড়ে, বা সাগরের নীল জলরাশিতে; ধুয়ে দিয়ে আসুন না আপনার প্রতিদিনের জমা ক্লান্তি!
কেন ভ্রমন করবেন?
কয়েকদিনের জন্য নিজের থেকে ছুটি নিয়ে ক্লান্তি দূর করতে ভ্রমনের গুরুত্ব অপরিসীম। নতুনকে জানা, বা সৃষ্টিকর্তার আর তাঁর সৃষ্টির প্রতি ভালবাসা ও আনুগত্য বেড়ে যাওয়া তো আছেই, এছাড়া আরো অনেক কারনেই ভ্রমন আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ন। কেন? সেই কথাই বলবো আজকের এই লেখায়।
যত ঘুরে বেড়াবেন, তত শিখবেন
প্রতিটি দেশেরই আছে নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজস্ব ঐতিহ্য। আছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন ইতিহাস। প্রতিটি দেশের সংস্কৃতি যেমন আলাদা, তেমনি স্বকীয়।
মনের দুয়ার খুলে দিতে ভিন দেশের সংস্কৃতিকেও জানার নেই কোন বিকল্প। ভ্রমনের মাধ্যমে আপনি মিশে যেতে পারবেন সে দেশের সংস্কৃতির সাথে, যা আপনার মনকে করবে আরো উন্মোচিত।
ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু
কাজের চাপে শ্রান্ত আপনি। দিনের পর দিন একই কাজ করতে করতে যেমন একঘেয়েমি পেয়ে বসবে আপনাকে, তেমনি তা আপনার কাজেও এনে দিতে পারে শৈথিল্যতা।
সবকিছুকে কয়েকদিনের জন্য ছুটি দিয়ে সামান্য কিছুদিনের জন্য দূরে কোথাও ঘুরে এলে তা যেমন মনকে প্রফুল্ল করে, তেমনি দেহমনকে করে তুলবে চাঙ্গা। ফিরে এসে দেখবেন, কাজের স্পৃহাও বেড়ে গিয়েছে বহুগুন!
নতুনকে আবিষ্কারের নেশা
মানুষ স্বভাবতই অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়। অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় মানুষ জয় করেছে এভারেস্ট পর্বত, সাঁতরে পাড়ি দিয়েছে ইংলিশ চ্যানেল। মানুষ আকাশে উড়েছে, নেমেছে সাগরের তলদেশে।
সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষের মাঝে নতুনকে আবিষ্কারের নেশা আছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। না, আপনাকে বলছি না ভ্রমন মানেই অজানাকে জয় করা। তবে পাশের দেশ ভারতেরই প্রতিটি রাজ্যের ভাষা, খাবারের স্বাদ, রান্নার ধরন ভিন্ন। তার কতটুকু জানেন আপনি? প্রতিটি দেশের মানুষের আচার ব্যবহার, পোষাক-আশাক যেমন ভিন্ন, তেমনি আপনার জন্য তা নতুনই। এই নেশাকে জয় করার জন্য কয়েকদিনের ছুটি তো নেয়া যেতেই পারে, তাই নয় কি?
মানুষ চিনুন, নিজেকে চিনবেন
প্রতিটি মানুষই স্বতন্ত্র। চেহারা, ব্যবহার, রুচি সবই ভিন্ন একে অপরের চেয়ে। আপনি যত বেশি বার, যত বেশি স্থানে ভ্রমনে যাবেন, আপনার নতুন মানুষ চিনার দ্বার উন্মোচিত হবে তত বেশি।
বাইরে যতই ভিন্ন হোক, ভিতরটা তো সবারই এক, সবার গায়েই আছে লাল রক্ত। বানিয়ে ফেলুন ভিন দেশের নতুন কিছু বন্ধু। ভ্রমন ছাড়া আর কে দিবে এত চমৎকার সুযোগ?
অভিজ্ঞতা সঞ্চার করুন
কথায় বলে, অভিজ্ঞতা আসে বয়সে। কথাটি মিথ্যা নয়। তবে একই সাথে ভ্রমনের সাথে আসে অভিজ্ঞতা। যত বেশি স্থানে ঘুরার সৌভাগ্য হবে আপনার, তত বেশি দেশের মানুষকে চিনতে পারবেন, তত বেশি সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারবেন। শিখতে পারবেন নতুন অনেক কিছু, যা আপনার দৈনন্দিন দিন চলতে কোন না কোন ভাবে কাজে আসবেই!
কম্ফোর্ট জোন থেকে নিজেকে সরিয়ে দেখুন একবার!
মানুষ স্বভাবত যেমন অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়, একই সাথে অজানাকে নিয়ে একটা ভয়ও কাজ করে মানুষের মধ্যে। নিজের কম্ফোর্ট জোন থেকে তারা সহজে বের হতে চায় না, আবার অজানাকে জানার তীব্র নেশাও পেয়ে বসে তাকে। সে কারনেই কোথাও ভ্রমনে গেলে আমাদের ভিন দেশের কোন খাবারের স্বাদ চেখে দেখতে যেমন ইচ্ছে করে তেমনি পরিচিত গন্ডির ভিতর , পরিচিত কোন খাবার আছে কি না মেন্যুতে, তাও খুঁজে দেখি। ভ্রমন আপনাকে বের করে আনবে এই দোলাচল থেকে।
একবার নিজের কম্ফোর্ট জোনকে পরাজিত করে বের হয়ে আসুন; জীবন পরতে পরতে বিষ্ময় নিয়ে অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
প্রশ্নটা আবার করি, ভ্রমন কেন করবেন? আসলে এই লেখায় ভ্রমনের প্রয়োজনীয়তা কিছুই আসলে ফুঁটিয়ে তোলা সম্ভব হয়নি। কিছু ব্যাপার লিখে বা বলেও বুঝানো যায় না, অনুভব করতে হয়। ভ্রমন ব্যাপারটাও সেই একই রকম। নিজেকে বিশ্বাস করে বাক্স-প্যাটরা গুছিয়ে কিছুদিনের জন্য দূরে কোথাও ঘুরে এসে দেখুনই না একবার, জীবন তো একটাই, বেঁচে থাকাটাও তো একবারই!